ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে যা জানা দরকার তার অধিকাংশই তারা জেনে ফেলেছেন। নিউটনের গতিসূত্র ও তাঁর বিশ্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র, তড়িৎ বিজ্ঞান ও চৌম্বক বিজ্ঞানকে একত্রিত করে ম্যাক্সওয়েলের তাত্ত্বিক কাজ এবং তাপগতিবিদ্যার সূত্র এবং গতি তত্ত্ব অনেক বৈচিত্র্যময় প্রতিভাসের ব্যাখ্যায় সফলতা লাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নে দুটি তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানের জগৎকে কাঁপিয়ে দেয়। এগুলো হলো ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক প্রদত্ত কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন প্রদত্ত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব। দুটি ধারণাই প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিতে সুগভীর প্রভাব ফেলেছে। কয়েক দশকের সাধনায় এই তত্ত্বগুলো পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান এবং ঘনীভূত পদার্থের পদার্থবিজ্ঞানের উন্নয়ন, বিকাশ ও তত্ত্বকে প্রেরণা জোগায়।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা তাই ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্বের আবিষ্কারের মাধ্যমে। এই তত্ত্বের সাহায্যে তিনি কালো বস্তুর বিকিরণের শক্তি কোয়ান্টায়নের কথা বলেন। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগতে আরেকটি বিপ্লব আনেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব ও আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রবর্তনের মাধ্যমে।
পদার্থবিজ্ঞানকে বলা হয় প্রকৃতিকে বোঝার বিজ্ঞান। অতিক্ষুদ্র পরমাণু বা আরও ছোট উপপারমাণবিক কণা থেকে বিশাল মহাবিশ্ব—সবই পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এখানেই শেষ নয়।
বস্তুর গতি নিয়ে গ্যালিলিও বিস্তর গবেষণা করেছেন। একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু যে নির্দিষ্ট সময়ে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে, তা তিনিই প্রথম প্রমাণ করেন। কথিত আছে, ইতালির পিসা শহরের হেলানো দালানে উঠে হাতে-কলমে পরীক্ষাটি করার জন্য একটা পালক ও কয়েন নিচে ফেলেছিলেন। যদিও বাতাসের বাধায় পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। আবার অনেকে বলেন, এই পরীক্ষাটি গ্যালিলিও সত্যি সত্যি করেননি। এটি একটি কিংবদন্তী। তবে প্রায় একই ধরনের একটি পরীক্ষা তিনি করেছেন বলে জানা যায়। গতিবিদ্যার বাইরেও পর্যবেক্ষণনির্ভর জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবী থেকে আবিষ্কার করেন বৃহস্পতি ও এর চারটি উপগ্রহ। এগুলো এখন গ্যালিলিয়ান বা গ্যালিলিওর চাঁদ নামে পরিচিত।
এরপরে স্বাভাবিকভাবেই এসে যায় আইজ্যাক নিউটনের কথা। পদার্থবিজ্ঞানের বরপুত্র তিনি। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের, বলা চলে, গোটা ভিত্তিটুকু গড়ে দিয়েছেন নিউটন একা হাতে। পৃথিবীতে বসে মহাকর্ষ নিয়ে তিনি যে ব্যাখা দিয়েছিলেন, তা কাজে লাগিয়ে চাঁদে পাড়ি দিয়েছে মানুষ। এ ছাড়া আলোকবিজ্ঞান নিয়ে তাঁর কাজগুলো আজও সমান প্রাসঙ্গিক। তাঁর রচিত ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। (এখানে লক্ষ করুন, নিউটনও কিন্তু বইয়ের নামে বলছেন ন্যাচারাল ফিলোসফির কথা, অর্থাৎ প্রাকৃতিক দর্শন।) এ ছাড়া গটফ্রিড উইলিয়াম লিবনিজ ও তিনি একই সময়ে আলাদাভাবে আবিষ্কার করেন ক্যালকুলাস। এই ক্যালকুলাস ব্যবহৃত হয় পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা হিসেবে, বা বলা যায়, ভাষাগত ভিত্তি হিসেবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অবদান অনেক। তাই নিউটনকে পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলতে দ্বিধা করেননি ইতিহাসবিদরা।
আলবার্ট আইনস্টাইনকে ঠিক পদার্থবিদ্যার জনক না বলে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলা যুক্তিযুক্ত। কয়েক শ বছরের প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের ধারাকে প্রশ্ন করেন বিশ শতকের এই বিজ্ঞানী। মহাকর্ষ ব্যাখ্যা করেন সম্পূর্ণ নতুনভাবে। সহজ করে বললে, পুরো মহাবিশ্বকে স্থান-কালের চাদর হিসেবে কল্পনা করে তিনি দেখান, মহাকর্ষ মূলত এই চাদরের বক্রতা ছাড়া আর কিছু নয়। পাশাপাশি অঙ্ক কষে দেখান, মহাবিশ্বের কোনো বস্তুই আলোর চেয়ে দ্রুত ছুটতে পারে না। মহাবিশ্বের ভর ও শক্তির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে খুলে দেন পদার্থবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত। এখানেই শেষ নয়, তাঁর আবিষ্কৃত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া বদলে দিয়েছে প্রযুক্তির জগৎ।
আমরা আগেই বলেছি, পদার্থবিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক দর্শনের সত্যিকার কোনো জনক নেই। কারণ, মানুষ দীর্ঘকাল ধরেই বিজ্ঞান চর্চা করছে। যেমনটা বলেছি, ইউরোপীয় অন্ধকার যুগে বিজ্ঞান নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন আরব বিজ্ঞানীরা। বলা চলে, বিজ্ঞান চর্চাকে সে সময় তাঁরাই এগিয়ে নেন। সে কালে ইরাকের পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ আল হাসান ইবনে আল হাইসাম (৯৬৫-১০৪০)—যাঁর আরেক নাম আলহাজেন—প্রথম বলেন, ‘বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো এসে আমাদের চোখে পড়লেই কেবল আমরা বস্তুকে দেখতে পাই। আলোক পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর অবদান এত বেশি যে তাঁকে আলোক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তাঁরও আগে, অর্থাৎ খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক শতাব্দী আগে, আর্কিমিডিস পানির প্লবতা আবিষ্কার করে সোনার খাদ যাচাই করেন। সূর্যের আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে পুঞ্জিভূত করে পুড়িয়ে দেন শত্রুর নৌযান (যদিও অনেকে বলেন, এটি কিংবদন্তী)।
আর্কিমিডিসেরও আগে পিথাগোরাস ও অ্যারিস্টোটলের মতো দার্শনিকেরা পর্যবেক্ষণভিত্তিক বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন, যে কথা আগেও বলেছি। তারও আগে মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতির রহস্য বুঝে সে অনুযায়ী জীবনকে সহজ করার উপায় বের করে ধীরে ধীরে এগিয়েছে। কিন্তু এর সবটা বিবরণ আজ আর জানার উপায় নেই।
দার্শনিক যুক্তির মাধ্যমে তাত্ত্বিকভাবে সত্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানী প্রকৃতিকে ব্যাখ্যার পাশাপাশি তা পরীক্ষা করে দেখেন, ব্যাখ্যা ঠিক আছে কি না। আরও বড় ব্যাপার, এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে তখন পর্যন্ত ব্যাখ্যাতীত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে কি না বা নতুন অনুমান করা যাচ্ছে কি না। পরীক্ষা বা এক্সপেরিমেন্টে পাশ করার সময় অনুমানের এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হয়। কারণ, বিজ্ঞান যদি নতুন অনুমান না করতে পারে—যেমন সূর্যগ্রহণ কবে হবে বা পৃথিবী থেকে চন্দ্রগামী মহাকাশযান যখন চাঁদে গিয়ে পৌঁছাবে, এতে কত সময় লাগবে ও সেই সময় পরে চাঁদ কোথায় থাকবে, তা জানা না গেলে আমরা আসলে বাস্তবে কিছু করতে পারব না। দৈনন্দিন জীবনে একটি বাড়ি কতটা ভার সইতে পারবে, বিমান বা গাড়ি কত বেগে চললে কত সময় পর কোথায় থাকবে—এসবই বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তা না হলে সভ্যতা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আজ এতদূর আসতে পারতে না।
যে কারণে আজও বিজ্ঞানের ইতিহাসে আরব বিজ্ঞানী, ভারত বা চীনের মতো এশিয়ান বিজ্ঞানীদের কথা খুব বেশি পাওয়া যায় না। অর্থাৎ হিসেবে যাঁরা স্বীকৃত, তাঁদের অবদানকে খাটো করার কোনো উপায় নেই। তবে কালে কালে যে সব মানুষ হারিয়ে গেছেন, যাঁদের কথা হয়তো সেভাবে উঠে আসেনি, তাঁদেরও আমাদের মনে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের জ্ঞান সামগ্রিক জ্ঞানচর্চার ফল। এটি কারো একার বা দু-তিনজনের হাতে গড়া নয়।
The vision of the Department of Economics at Puranbazar Degree College, Chandpur is to be a center of excellence in economic education and research. It aspires to foster innovation, critical inquiry, and evidence-based understanding of economic issues. The department envisions preparing graduates who can lead in advancing sustainable growth and societal well-being.
The mission of the Department of Economics at Puranbazar Degree College, Chandpur is to impart quality education in economic theory and applied research. It seeks to develop analytical and problem-solving skills to address national and global economic challenges. The department is dedicated to producing skilled graduates who contribute to sustainable development and policymaking.
Head, Lecturer, Physics
Demonstrator; Physics
Lab Assistant; Physics